Uncategorized

প্রশ্ন
রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে দ্বীন
পরিপূর্ণ হবার পর আবার ফক্বীহের
ব্যাখ্যা ও তাদের কথা অনুসরণ করতে
হবে কেন? তাদের কথা অনুপাতে
দ্বীন মানতে হবে কেন? তাহলে কি
রাসূল সাঃ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে
যাননি? ইমাম ও ফক্বীহদের মাধ্যমে
কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা অনুপাতে
দ্বীন মানাকে জরুরী মনে করা কি
রাসূল সাঃ অপূর্ণ দ্বীন রেখে যাবার
দাবি করা নয়?
এ বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত
ব্যাখ্যা জানতে চাই।
প্রশ্নকর্তা- আলী আহমাদ, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
উত্তর
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
উপরোক্ত বক্তব্যটি কথিত আহলে
হাদীস মতদর্শীদের বক্তব্য বলেই
প্রতীয়মান হচ্ছে। যারা বলেন রাসূল
সাঃ এর হাদীস পরিপূর্ণ তাই আর
কারো কথা মানার প্রয়োজন নেই।
এমনি আরেকটি ভ্রান্ত ফিরকা আছে
যাদের নাম হল [কথিত] আহলে কুরআন।
যারা বলে যে, কুরআন পরিপূর্ণ তাই
হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই।
তেমনি এ ভ্রান্ত ফিরকা [কথিত]
আহলে হাদীসরা বলে হাদীস পরিপূর্ণ,
তাই ফিক্বহ ও ফক্বীহের কোন
প্রয়োজন নেই।
উভয় দল মানসিকতার দিক থেকে একই
ক্যাটাগরির।
এ ভ্রান্ত আহলে কুরআন ও আহলে
হাদীসদের ভ্রান্তিতার মূল কারণ হল,
তারা দ্বীন পরিপূর্ণ হবার অর্থ
বুঝতে সক্ষম হননি। যদি সক্ষম হতেন,
তাহলে এরকম বোকামীসূলভ বক্তব্য
তারা প্রদান করতেন না। পয়েন্ট
আকারে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি।
কুরআন পরিপূর্ণ
আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত
মানুষদের জন্য পবিত্র কুরআনকে
পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে
নাজিল করেছেন। যে কুরআন পরিপূর্ণ
কিতাব। যাতে মানুষের সর্বাঙ্গীন
বিষয়ের সমাধান আছে বলে ঘোষণা
দিয়ে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমাদের
দ্বীনকে আমি আজ পরিপূর্ণ করে
দিলাম”। {সূরা মায়িদা-৩}
এখানে পরিপূর্ণ হবার মানে এই নয়
যে, প্রতিটি বিষয়ের সমাধান
পরিস্কার শব্দে বলে দ্বীনকে পূর্ণ
করা হয়েছে। মানে হল এমন কিছু উসূল
ও মূলনীতি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
হয়েছে যা ইতোপূর্বের কোন আসমানী
কিতাবে বলা হয়নি। সেসব উসূল ও
মূলনীতির মাধ্যমে মানুষের জীবনের
সমস্ত মাসআলা বের করা সম্ভব। কিন্তু
সুষ্পষ্ট শব্দে যে, মানুষের জীবনের
সকল মাসআলার সমাধান পবিত্র
কুরআনে নেই তাতো দিবালোকের
পরিস্কার। যেমন নামায ফরজের কথা
আছে। কিন্তু নামাযের রাকাত সংখ্যা
কুরআনে নেই। হজ্ব ফরজের কথা আছে
কিন্তু হজ্ব করার পূর্ণ তরীকা নেই।
এখন একজন যদি বলে যে, কুরআনতো
পূর্ণাঙ্গ তাহলে এসব বিষয় নেই
কেন? এসব দেখার জন্য হাদীস
লাগবে কেন? তাহলে কুরআন কি পূর্ণ
নয়?
আসলে কুরআন পরিপূর্ণ। কিন্তু যেভাবে
লোকটি ভাবছে সেভাবে পরিপূর্ণ নয়।
কুরআন পরিপূর্ণ মূলনীতি হিসেবে।
কুরআনে বলা আছে রাসূল সাঃ কে
অনুসরণ করতে। উক্ত মূলনীতি ও আদেশ
অনুপাতে কুরআনের যেসব নির্দেশের
ব্যাখ্যা কুরআনে না থাকে, তার
ব্যাখ্যা ও আমলী পদ্ধতি রাসূল সাঃ
থেকে নেয়া মানেই হল কুরআনকে
মানা। কারণ এটিও কুরআনেরই
নির্দেশ। তাই কুরআন পরিপূর্ণই থেকে
যাচ্ছে।
সুতরাং আহলে কুরআনদের দাবিটি
অসাড় ও মুর্খতাসূলভ বক্তব্য ছাড়া আর
কিছু নয়।
হাদীস পূর্ণাঙ্গ
ঠিকই একই পদ্ধতিতে কুরআন ও হাদীস
উভয়ই পরিপূর্ণ। এ পরিপূর্ণতাও
মূলনীতি হিসেবে পরিপূর্ণ। সকল
মাসআলা স্পষ্ট শব্দে কুরআন ও
হাদীসে থাকতে হবে এমন দাবি করা
মুর্খতা আর কিছু হবে না। আর স্পষ্ট
শব্দে সকল সমস্যার সমাধান কুরআনে
না থাকার দরূন কুরআন ও হাদীস
অপূর্ণাঙ্গও হয় না। বরং পূর্ণাঙ্গই
থেকে যায়। কারণ এখানে পূর্ণাঙ্গ
হবার উদ্দেশ্যই বুঝতে হবে। রাসূল
সাঃ কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে
দ্বীনকে পুর্ণ করে গেছেন মূলনীতি
হিসেবে। সকল মাসআলার সমাধান
পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করে
যাননি। যেমন-
নামাযের কোন রাকাতের কি হুকুম?
কয়টি সুন্নত? কয়টি ওয়াজিব? কয়টি
মুস্তাহাব? কয়টি নামায ভঙ্গের
কারণ? এসব পরিস্কার ভাষায় সুন্নত
ওয়াজিব, ফরজ, মাকরূহে তাহরীমি,
মাকরূহে তানজিহী, মুবাহ ইত্যাদি
শব্দসহ আল্লাহও বলেননি রাসূল সাঃ
ও বলেননি। অথচ দ্বীনতো পরিপূর্ণ।
কিন্তু এসব বিষয় পরিস্কার করে
কুরআন ও হাদীসের কোথাওতো বলা
হয়নি। তাহলে দ্বীন পরিপূর্ণ হল
কিভাবে?
আসলে যারা পরিপূর্ণতার অর্থ বুঝতে
পারেনি কেবল সেসব মুর্খ ব্যক্তিরাই
এমন প্রশ্ন করবেন। আসলে কুরআন ও
হাদীসতো পরিপূর্ণ হয়েছে মূলনীতি
হিসেবে। আর কুরআনেই পরিস্কার
নির্দেশ এসেছে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ
এর পর ফক্বীহকে মানতে। {সূরা
নিসা-৫৯} বলা হয়েছে না জানলে
বিজ্ঞ ব্যক্তিদের থেকে জেনে নিতে।
{নাহল-৪৩} ফক্বীহ মুজতাহিদদের
বলা হয়েছে কিয়াস ও গবেষণা করে
মাসআলার সমাধান করতে। {সুরা
হাশর-২}
তাহলে যেসব মাসআলা পরিস্কার
ভাষায় কুরআন ও হাদীসে নেই সেসব
মাসআলায় বিজ্ঞ মুজতাহিদ ফক্বীহদের
মাধ্যমে সমাধান জেনে আমল করার
নির্দেশতো কুরআনের নির্দেশ। এতো
আল্লাহরই নির্দেশ। তাহলে ফক্বীহকে
মানা মানেতো কুরআন ও হাদীসই
মানা। এখানে ফক্বীহ এর সমাধান
মানাকে দ্বীন অপূর্ণ হবার দাবি
করার অভিযোগ উত্থাপন করা কুরআন ও
হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া আর
কিছু নয়।
সারকথা
যেমন কুরআন পরিপূর্ণ হবার পরও
হাদীস মানতে হয়। এর দ্বারা কুরআন
অপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয় না। তেমনি
কুরআন ও হাদীস পরিপূর্ণ হবার পরও
ফক্বীহ ও ফিক্বহ মানতে হয়। এর
দ্বারা কুরআন ও হাদীস তথা দ্বীন
অপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয় না।
যেমন কুরআন পরিপূর্ণ হবার পরও
হাদীস মানতে হয় কুরআনের
নির্দেশনার কারণেই।
তেমনি কুরআন ও হাদীস পরিপূর্ণ
হবার পর ফিক্বহও ফক্বীহকে মানতে
হয় কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার
কারণেই।
যেমন হাদীস মানা কুরআনকে অপূর্ণ
প্রমাণের দলীল নয়, তেমনি ফিক্বহ
মানা কুরআন ও হাদীসকে অপূর্ণ
মানার প্রমাণবাহী নয়।
কথিত আহলে হাদীসদের কাছে
আমাদের প্রশ্ন
যদি কথিত আহলে হাদীসদের দাবি
মতে কুরআন ও হাদীসে পরিস্কার
ভাষায় সকল বিষয়ের সমাধান থেকে
থাকে, আর সকল সমস্যার সমাধান
পরিস্কার ভাষায় না থাকার
দাবিকারী ব্যক্তি যদি কুরআন ও
হাদীসকে অপূর্ণ বলে দাবিকারী হয়ে
গিয়ে থাকে, তাহলে এসব কথিত আহলে
হাদীসদের কাছে আমাদের কিছু
প্রশ্ন। যেসব প্রশ্নের উত্তর প্রদান
করে আমাদের তাদের মতাদর্শী হবার
জন্য সহায়ক হবার আবেদন করছি।
যদি কুরআন ও হাদীস পরিস্কার
ভাষায় সকল সমস্যার সামাধান থেকে
থাকে, তাহলে আমাদের প্রশ্নগুলোর
কুরআন ও হাদীসের পরিস্কার ভাষায়
জবাব চাই। কোন কিয়াস বা ব্যক্তির
মতামত উল্লেখ করা যাবে না-

ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাত ও মুস্তাহাব
কাকে বলে? কুরআন ও সহীহ হাদীসের
শব্দ দিয়ে জানতে চাই। কোন ব্যক্তির
মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।

হারাম, মাকরূহে তাহরীমি, মাকরূহে
তানজিহী কাকে বলে? সংজ্ঞা কুরআন
ও সহীহ হাদীসের শব্দ দিয়ে জানতে
চাই। কোন ব্যক্তির মতামত
গ্রহণযোগ্য নয়।

নামাযের নিয়ত করার সময় মনে মনে
“সময়” “নামায” “সুন্নাত-ফরজ”
ইত্যাদির মাঝে কোন কোন বিষয়ের
ইচ্ছা করতে হবে? কুরআন ও সহীহ
হাদীসের আলোকে জানতে চাই।

নামাযের ফরজ কয়টি ও কি কি? ফরজ
শব্দ উল্লেখ পূর্বক কুরআন ও সহীহ
হাদীসের শব্দ দিয়ে জানতে চাই।
কোন ব্যক্তির মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।

নামাযের সুন্নত কয়টি ও কী কী?
সুন্নত শব্দ উল্লেখ পূর্বক কুরআন ও
সহীহ হাদীসের শব্দ দিয়ে জানতে
চাই। কোন ব্যক্তির মতামত
গ্রহণযোগ্য নয়।

নামাযের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?
ওয়াজিব শব্দ উল্লেখ পূর্বক কুরআন ও
সহীহ হাদীসের শব্দ দিয়ে সমাধান
জানতে চাই। কোন ব্যক্তির মতামত
গ্রহণযোগ্য নয়।

তাকবীরে তাহরীমার সময় আল্লাহু
আকবার শব্দটি হুবহু বলা কি ফরজ না
ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? কুরআন ও
সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।

তাকবীরে তাহরীমা একাকী নামায
আদায়কারী ব্যক্তি এবং মুক্তাদী
সর্বদা আস্তে আওয়াজে বলে। এটা
কুরআনের কোন আয়াত বা কোন সহীহ
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

তাকবীরে তাহরীমা ইমাম সাহেব
সর্বদা জোরে বলে থাকে। কুরআন ও
সহীহ হাদীসের কোথায় একথা
বিদ্যমান?
১০
নামাযে আউজুবিল্লাহ পড়া সুন্নাত না
ফরজ? যদি এটি কেউ না পড়ে, তাহলে
তার নামায হবে কি না? সহীহ
হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
আপাতত নামাযের শুরুর মাত্র দশটি
মাসআলার সমাধান কুরআন ও সহীহ
হাদীসের শব্দ দিয়ে জানতে চাই
উক্ত কথিত আহলে হাদীস/শব্দধারী
মুসলিম/গায়রে মুকাল্লিদ/
লামাযহাবী ভাইটির কাছে। যদি সব
সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদীসে
পরিস্কার থেকেই থাকে তাহলে
নিশ্চয় উক্ত আবশ্যকীয় জরুরী
মাসআলার সমাধান ও থাকবে কুরআন ও
হাদীসে। তো স্পষ্ট ও পরিস্কার শব্দে
উক্ত বিষয়গুলোর সমাধান জানিয়ে
আমাদের কথিত আহলে হাদীস হতে
সহযোগিতা করুন।

কুরআন ও হাদীস দ্বারা দ্বীন পূর্ণ হবার পর আবার ফিক্বহ ও ফক্বীহ মানতে হয় কেন?

সংক্ষিপ্ত পোষ্ট

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান